পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির ৫টি পদ্ধতি জানুন
পলিসিস্টিক ওভারির লক্ষণ কিপলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি কি এই বিষয়ে অনেকে ভালো একটা ধারণা রাখেন না। তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। পলিসিস্টিক ওভারিতে যারা ভোগছেন, তারা এই বিষয়ে বেশ গুরুত্বের সাথে নিয়ে জানবেন।
পলিসিস্টিক ওভারির ফলে নারীরা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভোগে থাকেন। তাদের এই সমস্যা গুলো তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপণ করায় খুবই প্রভাব ফেলে। তাই পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তি পেতে কি করতে হবে, তাই জানানো হবে আজকের লেখাটির মাধ্যমে।
পেজ সূচিপত্র : পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি
- পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি
- পলিসিস্টিক ওভারি কি
- পলিসিস্টিক ওভারি কেন হয়
- পলিসিস্টিক ওভারির লক্ষণ কি
- পলিসিস্টিক ওভারির উপসর্গগুলো কি
- পলিসিস্টিক ওভারি হলে করণীয়
- পলিসিস্টিক ওভারির চিকিৎসা
- পলিসিস্টিক ওভারির ফলে বাচ্চা নিতে কি সমস্যা হয়
- অতিরিক্ত ওজন কি পলিসিস্টিক ওভারির জন্য দায়ী
- লেখকের শেষ মন্তব্য
পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি
পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি কি পলিসিস্টিক ওভারি হলে অনেকেই অনেক হতাশ
হয়ে পড়েন। বুঝতে পারেন না আসলে কি করতে হবে। কারন অনেকেই বলে থাকেন যে এই সমস্যার
কোনো চিকিৎসা হয় না। যার কারনে তাদের মানসিক দিক আরো বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
এটা ঠিক যে, পলিসিস্টিক ওভারিতে ভোগা নারীদের একক ভাবে কোনো চিকিৎসা প্রদান করা
সম্ভব হয় না।
কারন বিশ্বের প্রায় ১০ জান নারীর মধ্যে প্রতি এক জন আক্রান্ত হয়ে থাকে এই
পলিসিস্টিক ওভারিতে। তবে বিষয়টি এই রকম নয় যে, সারা জীবন সমস্যাটি কে সাথে করে
বহন করতে হবে। সমস্যা আছে তো অবশ্যই তার সমাধান আছে। পলিসিস্টিক ওভারিতে যে সকল
নারী ভোগছেন তাদের মানসিক প্রথমে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।
তারা যাতে এই সমস্যাটি কে বেশ দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করতে পারে, সেই বিষয়ে খেয়াল
রাখতে হবে। পলিসিস্টিক ওভারি হলো এক জন নারীর ডিম্বাশয়ে কিছু সমস্যা। যার কারনে
সেখানে পরিপক্ক ডিম হতে পারে না। এতে বাধা সৃষ্টি হয়। নারী দেহে যখন
অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের পরিমাণ অধিক মাত্রায় বেড়ে যায়, তখন নারী দেহে বিভিন্ন
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে থাকে।
এর কারনে তারা বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়ে থাকেন। যেমন এক জন স্বাভাবিক মহিলার
পিরিয়ড হয়ে থাকে ২৫ দিন থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে সময়েই। কিন্তু যে সকল মহিলা গণ এই
পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যায় ভোগে থাকেন, তাদের পিরিয়ড হতে সময় নেয়, সাধারণত ৪৫ দিন
থেকে ৫০ দিনের মতো।কোনো নারীর পিরিয়ড এর থেকে বেশী সময় পড়ে হয়ে থাকে। এতো দীর্ঘ
সময় পর পিরিয়ড হওয়ার করনে নানা রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। তাই তারা অনেকটা
ভীতিকর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যায়।
তা ছাড়া যে সকল মহিলা গণ এই পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যায় ভোগে, তারা বাচ্চা নিতে
অক্ষম হয়ে থাকে। তাদের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হয়ে থাকে। তবে এই সমস্যার জন্য হতাশ না
হয়ে চিকিৎসাকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। যারা পলিসিস্টিক ওভারিতে ভোগে থাকেন
তাদের ওজনের মাত্রাও অনেক বেশী পরিমাণ হয়ে থাকে।
তাই আপনাদের প্রথমেই উচিত হবে এমন সব খাবার ছেড়ে দেওয়া যা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে
ফেলে।আপনারা যদি নিজের শরীরের ওজন স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হন, তাহলে
এই রোগের অনেক গুলো প্রকোপ থেকে কিন্তু বেঁচে গেলেন। তাই পর্যাপ্ত শারীরিক শ্রম ও
ডায়েট করার মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন নিজের ওজন কে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে চলে
আসতে। আমরা এখন ৫টি মুক্তির পদ্ধতি দেখে নি।
- সঠিক খাদ্য মেনে চলুন
- নিয়মিত ব্যায়ম করুন
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- হরমোনাল থেরাপি করুন
- মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখুন
সঠিক খাদ্যাভাস- আপনাদের উচিত সঠিক খাদ্য গ্রহন করা। কারণ এই রোগে
আকান্ত্র হলে আপনার সঠিক খাদ্য গ্রহন করা অনেক জরুরি। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম
হরমোনজনিত সমস্যার কারণে আপনার উচিত চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে এবং শাকসবজি,
বাদাম, বার্লি, চিয়া বীজ, মাছ, মুরগি, ডিম, গ্রিন টি, হার্বাল টি, লেবুর শরবত
ইত্যাদি গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার খান এবং চিনি সমৃদ্ধ খাবার যেমন সফট
ড্রিংক্স, কেক, পেস্ট্রি, সাদা চাল এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত ব্যায়ম- আপনার পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম থেকে বাচতে হলে
আপনাকে নিয়মিত ব্যায়ম করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়ম আপনাকে এই রোগের উপসর্গ কমাতে
সাহায্য করবে। আপনার যদি ব্যায়ম করার অভ্যাশ না থাকে তাহলে অভ্যাশ তৈরি করুন।
নিয়মিত বেশি বেশি হাটাচলা করুন, সাইকেল চালাতে পারলে বেশি ভালো, সাতার কাটতে
পারেন, আপনার ব্যায়ম আপনার হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহাজ্য করবে।
ওজন নিয়ন্ত্রন- পলিসিস্টিক ওভারি রুগিদের জন্য ঔষধ বাদেও একটি
কার্যকারী চিকিৎসা হচ্ছে ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা। আপনার যদি ওজন বেশি হয়ে থাকে তাহলে
এই রোগ আরো বেশি আকারে বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই আপনার ওজন বেশি হলে আপনার উচিত ওজন
নিয়ন্ত্রনে আনা তাহলে এই রোগের উপসর্গ বেশি বৃদ্ধি পাবেনা। ওজন কমালে ইনসুলিন
সেনসিটিভিটি বাড়ে এবং আপনার নিয়মিত মাসিক চক্র হতে পারে।
হরমোনাল থেরাপি- যাদের পলিসিস্টিক ওভারি রোগের উপসর্গ বেশি আকারে
দেখা যায় তাদের উচিত সর্বপ্রথমে ডাক্তারের পরামর্শে হরমোন টেস্ট করা। হরমোন টেস্ট
এর মাধ্যমে আপনার পলিসিস্টিক সিন্ড্রোম এর গতি বৃধি বোঝা সম্ভব। ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা হরমোন টেস্ট করাতে হবে। হরমোন টেস্ট করানোর
মাধ্যমে আপনাকে ঔষধ দেওয়া হবে এবং ঔষধ সেবনে আপনার মাসিক নিয়মিত হবে এবং অতিরিক্ত
এন্ড্রোজেন উৎপাদন কমাতে সাহায্য করবে।
মানসিক স্বাস্থ্য- যারা PCOS এ আক্রান্ত মহিলারা অতিরিক্ত মানসিক চাপ
নিবেন না এতে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন হবে। এই রোগে আক্রান্ত মহিলাদের
মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং ডিপ্রেশনে ভোগে তাই যতটা সম্ভব নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার
চেষ্টা করবেন। আপনার উচিত হবে মানসিক চাপ কমাতে পর্যাপ্ত ঘুম, চাইলে মেডিটেশন
করতে পারেন বা পেশাদার থেরাপির সাহায্য নিতে পারেন।
যে হুতো পলিসিস্টিক ওভারির মূল সমস্যা হলো নিয়মিত পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া, তাই
চিকিৎসাকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি এমন কিছু ঔষধ সেবন করতে পারেন যে গুলো আপনার
অনিয়মিত পিরিয়ড কে নিয়মিত করতে সাহায্য করবে। আর কোনো ভাবে যদি অনিয়মিত পিরিয়ড কে
নিয়মিত করে ফেলা যায়, তবে আপনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হবেন। এমন কি
আপনি তখন বাচ্চা ধারণ করার জন্যও উপযুক্ত হয়ে উঠবেন।
পলিসিস্টিক ওভারি কি
পলিসিস্টিক ওভারি কি জানতে পড়ুন পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি কি তা নিয়ে
আমরা বিস্তারিত জেনেছি। পলিসিস্টিক ওভারি হলো নারী দেহে পুরুষের যৌন হরমোন বৃদ্ধি
পাওয়ার ফলে এক ধরণের শারীরিক পরিবর্তন হওয়া। পুরুষ হরমোন অ্যন্ড্রোজেন নারীর দেহে
যখন অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায় তখন তাদের যে মাসিক চক্রটি রয়েছে তা স্বাভাবিক নিয়মে
চলে না।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কে সংক্ষেপে পি সি ও এস বলা হয়ে থাকে। এটি হলো একটি
হরমোন জনিত ব্যাধি। এক জন পূর্ণ বয়স্ক মহিলার ডিম্বাণু থেকে প্রতি মাসে একটি করে
পরিপক্ক ডিম দিয়ে থাকে। পরে এটি গর্ভ দশায় প্রাপ্ত হয়ে থাকে আর না হলে এটি নষ্ট
হয়ে যায়।
পলিসিস্টিক ওভারি হওয়ার কারনে নারী দেহে পক্ক ডিম্বাণু তৈরি হওয়াতে বাধা গ্রস্ত
হয়ে থাকে। তাই তখন সেখানে আর কোনো ডিম্বাণু নিঃসৃত হয় না। যার ফলে মহিলাদের
বন্ধ্যাত্ব তৈরি হয়ে থাকে। মাসিক ও হয় না নিয়মিত। এরই ফলে শরীরে নানা রকম জটিলতা
তৈরি হয়ে থাকে। অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের প্রভাব নারী দেহে যখন অনেক বেশী বেড়ে যায়,
তখন নারীদের ডিম্বাণুর আশে পাশে অনেক গুলো সিস্ট তৈরি হতে থাকে। এই সিস্ট গুলোই
ডিম্বাণু পরিপক্ক হতে বাধা সৃষ্টি করে। এরই কারনে নারী দেহে বিভিন্ন বিরূপ
প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যে গুলোর সমষ্টি কে একত্রে বলা হয়ে থাকে পলিসিস্টিক ওভারি
সিনড্রোম।
পলিসিস্টিক ওভারি কেন হয়
পলিসিস্টিক ওভারি কেন হয় বা পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি কি অনেকেরই মনে
প্রশ্ন থাকে কেন হয়ে থাকে এই পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম। পলিসিস্টিক ওভারি
সিনড্রোম এর সমস্যাটি হয়ে থাকে মূলত নারী দেহে যখন পুরুষ হরমোনের পরিমাণ অনেকটা
বেড়ে যায়। এই হরমোন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে মূলত ইনসুলিন হরমোনের প্রভাবে।
তাই নারী দেহে যদি ইনসুলিন হরমোনের প্রভাবও বেড়ে যায় তবে এই সমস্যটি দেখা দেয়।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম হলো নারীদের এক ধরণের হরমোম জনিত সমস্যা। হরমোনের
ভারসাম্য যখন নষ্ট হয়ে যায় তখনই এই সমস্যাটি দেখা দেয়।
তা ছাড়া শরীরে ওজন যখন অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায় তখনও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে
হয়। পলি মানে হলো বহু এবং সিস্ট হলো ডিম্বাণুর পাশে কিছু বস্তু জমা হওয়া।
পলিসিস্টিল ওভাটির ফলে এক জন নারীর ডিম্বাণুর আশে পাশে অনেক গুলো সিস্টের জন্ম
হয়ে থাকে যা একটি ডিম্বাণু কে পক্ক হতে বাধা তৈরি করে থাকে।
এই ওভারির সমস্যার কারনে নারী দেহে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। এক সুস্থ মানুষের
বি এম আই এর মান হয়ে থাকে ১৯ থেকে ২৪ এর মাঝ খানে। তবে পলিসিস্টিক ওভারি তে যে
সকল মহিলাগণ ভোগে থাকেন তাদের বি এম আই হয়ে থাকে ৩০ এরও বেশী উপরে। এই বিষয় গুলোও
পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা কে উস্কে দিয়ে থাকে।
পলিসিস্টিক ওভারির লক্ষণ কি
- মাসিক অনিয়মিত হয়
- অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজন পুরুষ হরমোন বিস্তার পাওয়া
- ওজন বেড়ে যাওয়া
- রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
- ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হওয়া
- মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়া
- ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হওয়া
- গর্ভধারণে ঝুকি বেড়ে যাওয়া
পলিসিস্টিক ওভারিরে লক্ষণ কি পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা হলে প্রথম যে লক্ষণটি
প্রকাশ পায় তার মধ্যে হলো পিরিয়ড বাধা গ্রস্ত হওয়া৷ মূলত ডিম্বনালীতে প্রচুর
পরিমাণে সিস্ট তৈরি হওয়ার ফলে এই সমস্যাটি দেখা যায়। ডিম্বাণুর আশে পাশে প্রচুর
পরিমাণে সিস্ট সৃষ্টি হয় যা ডিম্ব কে পক্ক হতে বাধা দিয়ে থাকে। এর ফলে পিরিয়ড
হওয়াতেও বাধা গ্রস্ত হয়।
উচ্চ মাত্রার পুরষ হরমোনের কারনে নারী দেহে সাধারণত পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা
দেখা দেয়। এর ফলে নারী দেহে পুরুষের মতো অনেক ব্রুণের সৃষ্টি হয়। কিংবা আগে থেকেই
যদি ব্রুণ থাকে তবে তার সংখ্যা আরো অনেক বেশী বৃদ্ধি পায়। হিরসুটিজম নামক এক
ধরণের সমস্যা দেয় নারী দেহে।হিরসুটিজম সমস্যা হলো নারী দেহে পুরুষের মতো করে লোম
গজানো।
এর ফলে নারী দেহে বুকে ও গালের দিকে লোম উঠে থাকে।তবে এই সমস্যা বিশ্বের অন্যন্য
নারীদের থেকে এশিয়া মহাদেশের নারীদের ক্ষেত্রে তেমন একটা ঘটে না। এটি ঘটার
সম্ভবানাও অনেক খানি কম। তা ছাড়া এর কারনে হাইপারমোনিয়া নামক সমস্যা গুলোও দেখা
দেয়। হাইপারমোনিয়া হলো অতিরিক্ত এবং দীর্ঘ দিন রক্তস্রাব হওয়া। তাছাড়া ওজন বৃদ্ধি
পাওয়া, রক্তে শর্করার হার বেশি হওয়া মানসিক চাপসহ নানা সমস্যাই ভুগে থাকে নারীরা।
পলিসিস্টিক ওভারির উপসর্গগুলো কি
পলিসিস্টিক ওভারির উপসর্গগুলো কি পড়ে ফেলুন পলিসিস্টিক ওভারি রোগের বেশ কিছু
উপসর্গ দেখা দেয়। এই উপসর্গ গুলো নানা রকম শারীরিক জটিলতার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
নারী দেহে যখন পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেন অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়, তখনই এই
পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যাটি দেখা দেয়।
এর ফলে নারীর ডিম্বাণুতে ডিম গুলো সঠিক ভাবে পরিপক্ক হতে পারে না। ডিম্বাশয়ের আশে
পাশে অনেক গুলো সিস্ট তৈরি হয়ে থাকে। যার কারনে এমনটা হয়ে থাকে। এই সমস্যার ফল
স্বরূপ বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি পড়তে হয় নারীদের।
পলিসিস্টিক ওভারি হওয়ার ফলে নারী দেহে পিরিয়ড নিয়মিত হতে বাধা গ্রস্ত হয়ে থাকে।
এই সমস্যা কে বলা হয়ে থাকে অলিগমোনোরিয়া। এই সমস্যার কারনে অন্য কোনো পিরিয়ড জনিত
রোগ গুলোও দেখা দিতে পারে। যাদের পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা রয়েছে তাদের অনিয়মিত
পিরিয়ড হতে দেখা যায়। তা ছাড়া উচ্চ মাত্রার পুরুষের হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের কারনে
নারীর পুরুষের বৈশিষ্ট্য গুলো প্রকাশ পেতে থাকে।
এর ফলে নারীদের স্বাভাবিক থেকে অনেক বেশী ব্রুণ হয়ে থাকে। তা ছাড়া শরীরের মাঝে
পুরুষের মতো অনেক লোম গজাতেও দেখা যায়। এই সমস্যা গুলো কে বলা হয়ে থাকে
হিরসুটিজম। পলিসিস্টিক সমস্যা হওয়ার ফলে নারীদের অনিয়মিত পিরিয়ড হয়ে থাকে। যার
কারনে যখন তাদের পিরিয়ড হয় তখন অনেক বেশী পরিমাণ রক্ত ক্ষরণ হয়ে থাকে।
পলিসিস্টিক ওভারি হলে করণীয়
পলিসিস্টিক ওভারি হলে আপনার করণীয় কি তা আমরা ইতমধ্যে কিছু পরামর্শ দিয়ে রেখেছি।
পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি কি তা সম্পর্কেই আমরা অনেক আগেই জেনেছি।
অনেক গুলো কারনে পলিসিস্টিক ওভারির জটিলতা তৈরি হয়ে থাকে। যার ফলে একক ভাবে এর
কোনো চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। এই রোগের তীব্রতা, রোগের শারীরিক সক্ষমতা এবং জীবন
ধারণের উপর নির্ভর করে থাকে।
এই সমস্যার জটিলতা এড়াবার জন্য জীবন ধারায় পরিবর্তন করাটা বেশ জরুরী। তা ছাড়া
ডায়েট কন্ট্রোল, ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকা হয় এই বিষয়টির
উপর। সবুজ শাক সবজি খাওয়া, ব্লাড প্রেসার কমানো গেলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্ত চাপ,
চর্বিতে কোলেস্টেরলের মাত্রা কামানোও পি সি ও এস এর মাত্রা কমিয়ে থাকে।
যদি কেউ এক জন তার নিজের ওজন ১০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারে তবে তার পক্ষে এই রোগের
কার্য ক্রম গুলো কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। আর তার ডিম্বাশয়ের কাজ গুলোও স্বাভাবিক ভাবে
হতো থাকে। তা ছাড়া চিকিৎসাকের সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক জরুরী। কেননা এই
রোগটি হলে মহিলাদের পুরুষদের মতো বিভিন্ন অবাঞ্ছিত লোম গজিয়ে থাকে, যার কারনে
চিকিৎসাকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ঔষধ সেবন করায় এই সব প্রতিরোধ করা যায়।
পলিসিস্টিক ওভারির চিকিৎসা
পলিসিস্টিক ওভারির চিকিৎসা কি তা আমরা অনেকে জানিনা। পলিসিস্টিক রোগ হলে তার জন্য
একক ভাবে কোনো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে তার জন্য আপনি চাইলে অতিরিক্ত যে
সকল জটিলতা গুলো আছে তা মোকাবিলা করতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
যেমন জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার করার মাধ্যমে পিরিয়ড কে নিয়মিত করা সম্ভব হবে।
তা ছাড়া মেটাফরমিন ও অ্যান্ট্রি অ্যান্ড্রজেন জাতীয় যে সকল ঔষধ গুলো রয়েছে যে
গুলো ব্যবহার করলে পিরিয়ড স্বাভাবিক হয়ে থাকে।
পলিসিস্টিক ওভারির ফলে বাচ্চা নিতে কি সমস্যা হয়
পলিসিস্টিক ওভারির ফলে বাচ্চা নিতে কি সমস্যা হয় তা অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে আশোলে
পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যায় যে সকল নারীগণ রয়েছে তারা সাধারণত বাচ্চা নিতে অক্ষম
হয়ে থাকে। কারন তাদের ডিম্বাণুর আশে পাশে অনেক সিস্ট তৈরি হয়ে থাকে যে গুলো
অনিয়মিত পিরিয়ড ঘটায়। তবে কোনো নারী যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার অনিয়মিত
পিরিয়ড কে নিয়মিত পিরিয়ডে পরিণত করে ফেলতে পারে তাহলে সে বাচ্চা ধারণ করতে সক্ষম
হবে। কয়েকটি সমস্যা নিচে উল্লেখ করা হলো
- পলিসিস্টিক ওভারির ফলে মেয়েদের ডিম্বানুর গুনগত মান কমে যায় এবং ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় যার ফলে গর্ভধারণ হতে সমস্যা হয়।
- পলিসিস্টিক ওভারির ফলে ডিম্বাশয়ে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় যা ডিম্বস্ফোটন হতে বাধা প্রদান করে ফলে গর্ভধারণ হতে সমস্যা হয়।
- পলিসিস্টিক ওভারির ফলে পিরিয়ড অনিয়মিত হয় ফলে গর্ভধারণ হতে বাধা গ্রস্ত হয়।
- পলিসিস্টিক ওভারির ফলে মেটাবলিক সমস্যা হয় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এতে ওজন বৃদ্ধি পায়, ডায়বেটিস সহ নানা সমস্যা গর্ভধারণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
- পলিসিস্টিক ওভারির ফলে অ্যান্ড্রোজেন পুরুষ হরমোন অতিরিক্ত উৎপন্ন হয় ফলে মেয়েদের ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি ঘটে।
- পরিশেষে বলা যায় যে পলিসিস্টিক ওভারি রোগে আক্রান্ত নারীরা গর্ভধারণ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
অতিরিক্ত ওজন কি পলিসিস্টিক ওভারির জন্য দায়ী
অতিরিক্ত ওজন কি পলিসিস্টিক ওভারির জন্য দায়ী হয়ে থাকে তা অনেকে মনে করেন বা
অনেকে জানতে চান। কারন এটি পলিসিস্টিক ওভারি হওয়া কে উদ্ধীপ্ত করে থাকে। ওজন বেশী
হওয়ার কারনেই যাদের দেহে অ্যান্ড্রজেন হরমোনের মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পেয়ে থাকে
তাদের পলিসিস্টিক ওভারি হওয়ার চান্স বেশি থাকে। তবে ওজন যদি স্বাভাবিক করা যায়
তাহলে এই পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম সমস্যা থেকে মুক্তি পায়ার সম্ভাবনা থাকে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি কি আশা করি এই
বিষয় নিয়ে বিস্তারিত অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য
ধন্যবাদ। এই বিষয়ে আপনার সম্পূর্ণ মতামত জানিয়ে যাবেন। পাশাপাশি এটি আপনার
বন্ধুদের তাছাড়া এই রোগে আক্রান্ত রুগীদের সাথে শেয়ার করতে পারেন শেয়ার করবেন।
ধন্যবাদ।
নেক্সাস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url